সবজির বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ
শাক-সবজিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন- মৌসুমভিত্তিক, ব্যবহারভিত্তিক, উৎপত্তি ভিত্তিক, ভক্ষণযোগ্য ভিত্তিক, শেকড়ের গভীরতা অনুযায়ী, মাটির উপরে বা নিচে জন্মানোভিত্তিক, উদ্ভিদতাত্ত্বিক ইত্যাদি।
ক) মৌসুম ভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ ও মৌসুম অনুযায়ী বাংলাদেশের সবজিগুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- (১) রবি মৌসুমের সবজি- এ সবজি শীতকালে জন্মে থাকে। উদাহরণ- ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, গাজর, লেটুস, শিম, ওলকপি, মুথা, টমেটো ইত্যাদি ।
(২) খারিফ সবজি- এ সবজি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে জন্মে থাকে। উদাহরণ- চালকুমড়া, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দল, ঢেঁড়শ, কলা, ডাঁটা, পুঁইশাক, পটল, কচু, বরবটি ইত্যাদি।
(৩) বারমাসি সবজি- এ সবজি সারা বছর জন্মে থাকে। উদাহারণ বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পেঁপে, শশা ইত্যাদি ।
খ) ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ- সবজি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে সবজিগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
১। সালাদজাতীয় সবজি- এ সবজিগুলো সাধারণত সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- শশা, গাজর, লেটুস, ক্যাপসিকাম, পেঁপে ইত্যাদি ।
২। তরকারিজাতীয় সবজি- এ সবজিগুলো তরকারি রান্নার জন্য শুধু ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- বেগুন, পটল, ঝিঙা, আলু, ধুন্দল ইত্যাদি।
৩। ভর্তাজাতীয় খাবার তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো অনেক সময় ভর্তা তৈরি করে খাওয়া হয়। উদাহরণ ওলকচু, কাঁচাকলা, পেঁপে, বেগুন ইত্যাদি।
৪। চাটনী তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো চাটনি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- টমেটো, ধনিয়াপাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি।
৫। ভাজা খাবার তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো ভাজা খাবার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- বরবটি, করলা, শিম, লালশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি।
৬। স্যুপ তৈরির সবজি- এ সবজিগুলো স্যুপ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- পিঁয়াজ পাতা, পুদিনা পাতা, সিলারি, গাজর, মটরশুটি ইত্যাদি।
গ) উৎপত্তিভিত্তিক সবজি- বাংলাদেশে যে সমস্ত শাকসবজির চাষ হচ্ছে সেগুলোকে উৎপত্তিস্থলের ভিত্তিতে দেশি ও বিদেশি হিসেবে ভাগ করা যায়। যথা
(১) দেশি সবজি- পটল, লালশাক, কলমিশাক, শিম, মিষ্টি কুমড়া, কচুজাতীয়, পাটশাক ইত্যাদি ।
(২) বিদেশী সবজি- কপিজাতীয়, লেটুস, সিলারী, গিমা কলমি, বীট, গাজর, ব্রোকলী, চিনা বাধাকপি ইত্যাদি।
ঘ) আহারোপযোগী/ভক্ষণযোগ্য ভিত্তিক- ফসলের প্রকারভেদে বিভিন্ন অংশ খাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে সবজিগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
(১) পাতাজাতীয় সবজি- লালশাক, পুঁইশাক, লেটুস, পার্সলি, সিলারি ইত্যাদি।
(২) ফলজাতীয় সবজি- বেগুন, টমেটো, কুমড়াজাতীয়, শিম, বরবটি ইত্যাদি ।
(৩) কম্পাল সবজি- আলু, মেটে আলু, পাহু আৰু ইত্যাদি।
(৪) কাজাতীয় সবজি- ডাঁটা, পানিকচুর লতা ইত্যাদি ।
(৫) কচুজাতীয় সবজি- মুখীকচু, ওলকচু, মানকচু ইত্যাদি।
(৬) ফুলজাতীয় সবজি- ফুলকপি, ব্রোকলি, মিষ্টি কুমড়া ফুল, শাপলা ফুল, বকফুল ইত্যাদি।
(৭) বীজজাতীয় সবজি- শিম বীজ, কাঁঠাল বীজ, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
ঙ) শিকড়ের গভীরতাভিত্তিক সবজি- এ জাতীয় সবজিকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- অগভীর ও গভীর শিকড়জাতীয় সবজি।
১। অগভীর শেকড়যুক্ত সবজি- বীট, গাজর ইত্যাদি।
২। গভীর শিকড়যুক্ত সবজি- মূলা, মেটে আলু ইত্যাদি।
চ) জীবনকালভিত্তিক সবজি- জীবনকালের ভিত্তিতে সব সবজিকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) বর্ষজীবী (২) দ্বিবর্ষজীবী ও (৩) বহুবর্ষজীবী
১। বর্ষজীবী সবজি-মুলা, গাজর, লেটুস, ওলকপি, বীট ও আলু ইত্যাদি।
২। দ্বিবর্ষজীবী সবজি- কাঁকরোল, করলা, শিম, বরবটি, বেগুন, পটল, পুঁইশাক ইত্যাদি।
৩। বহুবর্ষজীবী সবজি- পেঁপে, মেটে আলু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি।
৩। বহুবর্ষজীবী সবজি- পেঁপে, মেটে আলু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি।
একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী সবজির পরিবার ও উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম
বীজ বলতে আমরা বীজত্বক দ্বারা আবৃত এবং সুপ্ত প্রম্পযুক্ত পরিণত, পরিপুষ্ট ও নিষিক্ত ডিম্বককে বীজ হিসেবে বুঝে থাকি। একটি সাধারণ বীজের ২টি অংশ থাকে। যথা- বীঘত্বক ও বীজসার বা কার্ণেল। একটি বীে বীজপত্রের সংখ্যা অনুসারে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী।
(১) একবীজপত্রী- ধান, গম, ভুট্টা, কলা, খেজুর, কচু ইত্যাদি ।
(২) দ্বিবীজপত্রী - শিম, চিচিংগা, ধুন্দল, বেগুন, ছোলা, কঁঠাল ইত্যাদি।
এছাড়া আরও এক প্রকারের উদ্ভিদ আছে যথা- বহুবীজপত্রী বীজ। উদাহরণ পাইনগাছ। যে কোন বীজেরই একটি বা তার বেশি বীজপত্র থাকে। বীজপত্রের সংখ্যা যখন একটি থাকে তখন তাকে একবীজপত্রী বীজ বলে। আর বীজে বীজপত্রের সংখ্যা যখন দুটি থাকে তখন তাকে দ্বিবীজপত্রী বীর বলে। একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী বীজের পার্থক্য
একবীজপত্রী বীজ | দ্বিবীজপত্রী বীজ |
১। সাধারণত বীজত্বক ও ফলত্বক পরস্পর যুক্ত থাকে | ১। বীজত্বক ও ফলত্বক বুক্ত থাকে না। |
২। ভ্রূণ ছোট ও একটি বীজপত্র থাকে। | ২। ভ্রূণ বড় এবং এতে দুটি বীজপত্র থাকে। |
৩। ভ্রূণ মূল ও ভ্রূণমুকুল আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে । | ৩। কোন আবরণ থাকে না। |
৪। বীজপত্র ভ্রূণাক্ষের শীর্ষে এবং ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল ভ্রূণাক্ষের দু'পাশে থাকে। | ৪। ভ্রূণাক্ষের দুপাশে বীজপত্রদ্বয় ও দুপ্রান্তে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল থাকে। |
একবীজপত্রী শাকসবজী
১। বর্গ এরিয়ালেস- (Ariales)
২। গোত্র- এরেসী (Araceae)
Colocasia Esculent (কোলোকেশিরা এসকুলো)- মুখী কচু, পানি কচু, পঞ্চমুখী কচু ।
Alocasia mycorrhiza বা Indica (লোকেপিয়া ম্যাক্রোরাইলা ইন্ডিকা)মানকচু (coco yarn)
২। বর্গ - লিলিয়ালেস (Liliales)
৩। গোত্র- লিলিয়েশী (Liliaceae)।
Alium ceps পেঁয়াজ (Onion)
Alium satium রসুন (Garlic)
দ্বিবীজপত্রী শাকসবজী
১। বর্গ-এমারানথালেস (Amaranthiales)
গোত্র- এমারানথেসি (Amaranthaceac )
Amaranthus gangeticus লালশাক (Red amaranths)
Amaranthus lividus (Amaranthus)
২। বর্গ-বাসিলালেস (Basellales)
গোত্র- ব্যাসিলেসি (Basellaceac )
Basella alba পুঁইশাক (সাদা) Indian spinach ( white)
৩। বর্গ-বোরাজীনালেস (Baragiinales)
গোত্র- কনভুলভুলেসি (Convolvulaceae)
Impomea aquatica কলমিশাক (Swanp cabbage)
৪। বর্গ-রোডালেস (Rhoedales)
গোত্রে ক্রুসিফেরি (Crucipperae)
Bassica oleracea Variety-Capitata বাঁধাকপি (Cabbage)
Bassica oleracea Variety-botrytis ফুলকপি (Cauliflower)
Raphanus Sativus মূলা
৪। বর্গ-কিউকারবিটালেস (Cucurbitales)
গোত্র- কিউকারবিটেসি (Cucurbitaccac)
Cucurbita moschata মিষ্টি কুমড়া (Sweet gourd)
Cucumis Sativus শশা (Cucumber)
৫। বর্গ-লিগুমিনোসালেস (Leguminosales)
গোত্র- লিগুমিনোসি (Leguminosae)
Dolichos Lablab শিম (Country bean)
Vigna Sesquipedalis বরবটি (Yard long bean)
৬। বর্গ-মালভলেস (Malvales)
গোত্র- মালভেসি (Malvaceac )
Hibiscus esculentus ঢেঁড়স (Okra or Ladys finger)
৭। বর্গ- পোলেমোনিয়ালেস ( Polemoniales)
গোত্র- সোলানেসি (Solanaceac )
Solanum tuberosum আলু (Potato)
Solanum melongena বেগুণ (Brinjal)
Lycopersicon esculentum টমেটো (Tomato)
শাক-সবজির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ— শাক-সবজির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি বিভাগ সম্পর্কে এ অধ্যায়ে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক কথায় উত্তর
১. মৌসুম অনুযায়ী বাংলাদেশের সবজিগুলোকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ?
২. শেকড়ের গভীরতা ভিত্তিক সবজিগুলোকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
৩. একটি সাধারণ বীজে কয়টি অঙ্গ থাকে ?
৪. একটি বীজে যখন বীজপত্রের সংখ্যা দুটি থাকে তখন তাকে কী বলে?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সবজির উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করে প্রত্যেকটি ২টি করে উদাহরণ দাও ।
২. একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রীর মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে?
৩. গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ২টি করে সবজির ইংরেজি, বাংলা ও উদ্ভিদতাত্তিক নাম লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সবজিকে কিসের কিসের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয় তা উল্লেখ পূর্বক যে কোন ৩টি শ্রেণির উদাহরণসহ তার শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
Read more